অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ জেনে নিন
মেয়েদের অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ কি? এই নিয়ে অনেকেই জানতে চাই। চুল পড়া এটি একটি কমন সমস্যা। চুল আমাদের সবারই জন্মের পর থেকে একদম যতদিন মাথায় চুল থাকবে চুল তো পড়েই। কিন্তু এই চুল পড়া নিয়ে আমরা চিন্তাগ্রস্থ্য থাকি।
আপনি যদি আপনার অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ নিয়ে চিন্তিত থাকেন তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এছাড়াও মেয়েদের চুলের জন্য কোন তেল সবচেয়ে ভাল সেই সম্পর্কেও বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
ভূমিকা
চুল পড়া নিয়ে আমরা চিন্তাগ্রস্থ্য থাকি। টাক হয়ে যাচ্ছে, চুল পঢ়ে যাচ্ছে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে। একজন মানুষের চুল পড়ার ধরন বা চুল পড়ার সমস্যা বা লক্ষন কি ধরনের হলে আপনি বুঝবেন আপনার পড়ার সমস্যা তৈরি হয়েছে। সেই বিষয়বস্তু নিয়েই আলোচনা করবো মনোযোগ সহকারে পুরো আর্টিকেলটি পড়ুন।
অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ
অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ জানা না থাকলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্যই। চুল পড়ার কারণ যদি বলি বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন সাধারনত চুল পড়ার কিছু হরমোনাল কারণ থাকতে পারে। কিছু ফাঙ্গাল ইনফেকশনের কারণে হতে পারে। অনেকের কিছু পরিবেশের কারণে চুল পড়তে পারে।
এছাড়াও কিছু ভিতরের রোগের কারণেও অনেক সময় চুল পড়তে পারে। মাথায় টাকপড়া একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, কোনো রোগ নয়। টাক বা নির্দিষ্ট নকশাকারে চুল পড়ার ধরনটি অনেকটাই বংশগতির সঙ্গে সম্পর্কিত। গবেষণায় দেখা গেছে, বাবার টাক থাকলে সন্তানেরও টাক হওয়ার আশঙ্কা থাকে। দিনে গড়ে প্রায় ১০০টির মতো চুল পড়া স্বাভাবিক এবং এটা প্রাকৃতিক।
আরো পড়ুনঃ মেথির উপকারিতা ও অপকারিতা কি।
তবে এর বেশি চুল পড়তে থাকাটা টাক প্রবণতার লক্ষণ। টাক পরাকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবে মেনে নিয়ে জীবন যাপন করা হলো সবচেয়ে স্মার্ট আর সহজ সমাধান। তবে যারা এটা মেনে নিতে পারবেন না তাদের জন্য রয়েছে নানা ধরনের ট্রিটমেন্ট।
মেয়েদের অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ
হরমোনজনিত ও থাইরয়েডের সমস্যার কারণে মেয়েদের অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ শুরু হতে পারে। এছাড়াও খাবারের উপর চুলের স্বাস্থ্য অনেকটাই নির্ভশীল। সুষম খাবারের অভাবে এবং ভিটামিনের ঘাটতিতে আপনার চুল পড়তে পারে। হঠাৎ, গুরুতর ক্যালোরি সীমাবদ্ধতা বা ওজন হ্রাস চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি চক্রকে ব্যাহত করতে পারে, যার ফলে অস্থায়ী চুল পড়ে যায়।
অস্ত্রোপচারের মতো শারীরিক চাপ বা দুঃখের মতো মানসিক চাপ চুল পড়াকে ট্রিগার করতে পারে, বিশেষ করে চুলের বৃদ্ধি চক্রের বিশ্রামের পর্যায়ে। চুলের যত্নের পণ্যগুলিতে কঠোর রাসায়নিকের অত্যধিক ব্যবহার বা অতিরিক্ত স্টাইলিং চুলের ফলিকলগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং চুলের ক্ষতি হতে পারে।
ক্যান্সারের চিকিত্সা চুলের ফলিকল সহ দ্রুত বিভাজনকারী কোষগুলিকে লক্ষ্য করে, যা অস্থায়ীভাবে চুলের বৃদ্ধি বন্ধ করতে পারে এবং চুল পড়ার কারণ হতে পারে। অস্বাভাবিক থাইরয়েড, রক্তস্বল্পতা, ভিটামিনের অভাব ইত্যাদির মতো বিভিন্ন চিকিৎসা সমস্যা চুলের বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করতে পারে। গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তন, মেনোপজ, চুলের বৃদ্ধির চক্রকে পরিবর্তন করতে পারে এবং চুলের ক্ষতি হতে পারে।
উচ্চ ভিটামিন এ ডোজ সহ রক্তচাপ এবং গাউটের ওষুধের মতো কিছু ওষুধ চুলের ফলিকলকে প্রভাবিত করে চুলের ক্ষতি করতে পারে। মহিলা প্যাটার্ন চুল পড়া দৃঢ়ভাবে জেনেটিক্স দ্বারা প্রভাবিত হয়।
অল্প বয়সে চুল পড়ার কারণ
আজকে আমরা একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো। সেটি হলো খুবই কমন একটা সমস্যা বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সেটি হলো অল্প বয়সে চুল পড়া বা টাক হয়ে যাওয়া। আসলে চুল পড়া নিয়ে যদি কথা বলি তাহলে অনেক গুলো কারণ এর ভিতর সবচেয়ে কমন যে কারণটা আমরা বলে থাকি জেনেটিক্যাল বা বংশগত। যেটিকে আমরা বলি Androgenetic alopecia (AGA).
এছাড়াও আরোও মেজর কিছু সমস্যা রয়েছে, যেমন অতিরিক্ত রাত জাগা, রাতে ঘুম না আসা, অতিরিক্ত ধুলোবালিতে থাকা, প্রচুর পরিমানে খুশকি হওয়া, চুলে বিভিন্ন ধরনের জেল, কেউ স্ট্রেট করে, কেউ কালার করে। এগুলো ব্যবহার করলে অল্প বয়সে চুল পড়তে পারে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে হঠাৎ করে কেউ যদি ডায়েট শুরু করে দেয় যার ফলে পুষ্টি উপাদান টা তার শরীর থেকে চলে যায় তখন কিন্তু চুল পড়তে পারে।
হঠাৎ করে অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ
হঠাৎ করে অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ কি? জানা না থাকলে আর্টিকেলটি মন দিয়ে পড়ুন। দুনিয়াতে চুল পড়ে না এমন মানুষ খুব কমই আছে। আমাদের সবারই কম বেশি চুল পড়ে। আসলে চুল পড়াটা খুব স্বাভাবিক একটি বিষয়। আমাদের ডেইলি ১০০ টা করে চুল পড়া কিন্তু খুব নরমাল বিষয়। কারণ আমাদের যেমন একটা লাইফ সার্কেল আছে ঠিক তেমনি চুলেরও একটা লাইফ সার্কেল আছে।
সুষম খাবারের অভাবে এবং ভিটামিনের ঘাটতিতে আপনার চুল পড়তে পারে। অতিরিক্ত রাত জাগা, রাতে ঘুম না আসা, অতিরিক্ত ধুলোবালিতে থাকা, প্রচুর পরিমানে খুশকি হওয়া ইত্যাদি কারণে হঠাৎ করে চুল পড়তে পারে।
মেয়েদের চুলের জন্য কোন তেল সবচেয়ে ভাল
আমাদের দেশে যেটা প্রচলিত মেয়েরা নারকেল তেল দিয়ে অভ্যস্ত। বাজারে অনেক ধরনের নারকেল তেল পাওয়া যায়। এক্সট্রা ভার্জিন নারকেল তেল পাওয়া যায়। নারকেল তেলে কেউ একটু মেথি, কাঠবাদামের তেল বিভিন্ন ভ্যারাইটি তেল কিন্তু মেয়েরা ব্যবহার করে থাকে। চুলের জন্য স্পেসিফিক যে অন্য কোনো তেল বা অনেকেই মিক্সড তেল দিয়ে থাকে।
পুষ্টিবিদ আয়শা সিদ্দিকা মিক্সড তেলটা প্রেফার করে থাকেন যে, নারকেল তেলের সাথে যদি কাঠবাদামের তেল, আমন্ড ওয়েল, ক্যাস্টোরল তের পরিবর্তন করে করে আপনি দিতে পারেন। সব সময়ের জন্য বেস্ট হলো নারকেল তেল। এটা পিওর হতে হবে এবং এটা কেমিক্যাল মুক্ত হতে হবে।
চুলের যত্নে কি কি খাওয়া উচিত
মানুষের সৌন্দর্যের অপর নাম চুল। ঘন সুস্থ্য মজবুত চুল কে না চায়। যেকোনো মানুষকে সুন্দর ও আকর্শনীয় করে তুলতে চুলের ভূমিকা বিশাল। চুলের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান চুলে যদি না পৌছায় তাহলে আমাদের চুল পড়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। তােই এমন কিছু খাবার খেতে হবে যা আমাদের চুলের স্বাস্থ্যের জন্য উপকার।
চুল পড়া বন্ধ করতে প্রথমে যে খাবারটির কথা বলবো তা হলো ডিম। ডিম প্রাকৃতিক প্রটিনের অন্যতম সেরা উৎস। ডিমের বেশিরভাগ অংশ ৯০% ক্যালসিয়াম আছে, আয়রন , ফসফরাস , জিঙ্ক , থায়ামাইন, ভিটামিন বি 6, ভিটামিন বি 12 এবং প্যানথোথেনিক অ্যাসিড আছে। ডিম আমাদের চুল পড়া বন্ধ করে এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
ডিমের পরে যে উপাদানটির কথা বলবো সেটি হলো মাছ। মাছ হলো ওমেগা 3 ফ্যাটি এসিড এবং প্রটিন সমৃদ্ধ একটি খাদ্য। ওমেগা 3 ফ্যাটি এসিড চুলের গোড়া মজবুত করতে সাহায্য করে এবং চুল পড়া বন্ধ করে। বিভিন্ন ধরনের বাদাম, আঁখরোট, তিল চুলের ভেঙ্গে যাওয়া প্রতিরোধ করে এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
বিভিন্ন ধরনের সবজি ও শাকে থাকা ভিটামিন মিনারেল্স আমাদের চুলের গোড়া মজবুত করে। বিশেষ করে গাজর, গাজরে থাকা ভিটামিন এ আমাদের চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
কোন ভিটামিন চুল গজাতে সাহায্য করে
অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ সম্পর্কে আমরা ইতিমধ্যে অনেক কিছুই জেনেছি। এবার জানবো নতুন চুল গজাতে কোন কোন ভিটামিন গুলো সাহায্য করে। চুল গজাতে ভিটামিন বি7 এর গুরুত্ব অনেক। এছাড়াও ভিটামিন ই ক্যাপসুল চুল গজাতে এবং চুল বেড়ে উঠতে সাহায্য করে।
নতুন চুল গজাতে কতদিন সময় লাগে
সম্পূর্ণ মাথায় চুল গজাতে ২ মাসের বেশি সময় লাগবে না। আপনার মাথা যেমনই হোক না কেন ২ মাসের বেশি সময় লাগবে না নতুন চুল গজাত। এক্ষেত্রে কিছু কিছু মানুষের চুলের গ্রোউথ অনেক ভালো থাকে। চুল গজানোটা কিন্তু নির্ভর করে আপনার হরমোনের উপর এবং আপনার শারীরিক গঠনের উপর।
আরো পড়ুনঃ মুখে ব্রণ কমানোর উপায়
চুলের পুষ্টি এবং আপনার মাথার চুলের গ্রোউথ ভালো হয় তাহলে সম্পূর্ণ নতুন চুল গজাতে ১ মাস ১৫-২০ মত সময় লাগবে এর বেশি সময় লাগবে না।
কি কি খাবার খেলে চুল গজায়
চুলের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান চুলে যদি না পৌছায় তাহলে আমাদের চুল পড়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। তােই এমন কিছু খাবার খেতে হবে যা আমাদের চুলের স্বাস্থ্যের জন্য উপকার। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক কি কি খাবার খেলে চুল গজায়।
- বাদাম: আলমন্ড, আঁখরোট, কাজুবাদাম বা চিনা বাদাম, যেকোনো ধরনের বাদামই নতুন চুল গজাতে ভালো সাহায্য করে। কারণ বাদামে রয়েছে বায়োটিন ভিটামিন বি, ওমেগা 3 এবং ফ্যাটি এসিড। এগুলো চুলের গোড়াকে মজবুত বানায় ফলে চুল পড়াও বন্ধ হয়ে যায়।
- ডিম: ডিম প্রাকৃতিক প্রটিনের অন্যতম সেরা উৎস। ডিমের বেশিরভাগ অংশ ৯০% ক্যালসিয়াম আছে, আয়রন , ফসফরাস , জিঙ্ক , থায়ামাইন, ভিটামিন বি 6, ভিটামিন বি 12 এবং প্যানথোথেনিক অ্যাসিড আছে। যার ফলে আপনার মাথায় নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে।
- প্রটিন জাতীয় খাবার: দেখুন প্রটিন তো অনেক খাবারেই পেয়ে যাবেন কিন্তু চুল গজানোর জন্য কোন খাবার থেকে প্রটিন নিবেন ওটাই মেন। আমাদের চুল মূলত কেরার্টিন দিয়ে গঠিত এটি এমিউনো এসিড দিয়ে তৈরি এক ধরনের প্রটিন। তাই মাথায় নতুন চুল গজানোর জন্য অবশ্যই আপনার শরীরে পর্যাপ্ত এমিউনো এসিড দিতে হবে। আর এই এমিউনো এসিড রয়েছে মাছ, মাংস, পনির, দুধে। তাই আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এগুলো রাখার চেষ্টা করুন
লেখকের শেষ মন্তব্য
অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ এবং মেয়েদের চুলের জন্য কোন তেল সবচেয়ে ভাল এবং কি কি খাবার খেলে চুল গজায় এই সব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। যদি আপনি লেখাগুলো মন দিয়ে পড়ে থাকেন তাহলে চুল পড়া এবং গজানো নিয়ে আপনার যত প্রশ্ন ছিল তার উত্তর পেয়ে যাবেন। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনি মন দিয়ে পড়েছেন এবং বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
আমার আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে বা আপনার উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন। কারণ আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত এই ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি। ধন্যবাদ।
সাফারি a2z এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url