প্রতিদিন ডাব খেলে কি হয় জেনে নিন

প্রতিদিন ডাব খেলে কি হয় তা নিয়ে আজকের এই আলোচনা। ডাবের পানি শরীরের জন্য খুবই উপকারি। শরীর থেকে ক্লান্তি ঝেরে ফেলেই তাজা হওয়ার জন্য প্রথমে প্রাকৃতিক যে পানিয় ‍টি আমাদের মাথায় আসে সেটি হলো ডাবের পানি।
প্রতিদিন ডাব খেলে কি হয় জেনে নিন
সুচিপত্রঃ
প্রতিদিন ডাব খেলে কি হয়? এই বিষয়টি যদি আপনার জানা না থাকে তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্যই। এছড়াও ডাবের পানি কখন খাওয়া ভালো এই নিয়েও আলোচনা করবো।

ভূমিকা

ডাবের পানি পান করলে অনকে কষ্ট হ্রাস পায় ও এক ধরনের আলাদা তৃপ্তি আসে আমাদের শরীরে। ডাবের ফলন হয় মাটি আর মনোরম আবহাওয়ার উপর ভিত্তি করে। লবনাক্ত মাটিতে ডাবের ফলন বেশি হয়। ডাবের পানি ছাড়াও ভেতরের শাঁশটাও খেতে বেশ সুস্বাদু হয়। আবার ডাবের ছোবড়া শুকনো করে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। সব মিলিয়ে ডাবের সমস্ত অংশটাই আমাদের উপকারে লাগে।

প্রতিদিন ডাব খেলে কি হয়

প্রতিদিন ডাব খেলে কি হয়? এই বিষয়টি অনেকেই জানেন আবার অনেকেই জানেন না। ডাবের পানি মানুষের শরীরের জন্য কতটা উপকারি সেটি আপনার ধারনার বাইরে। টানা ৭ দিন এই ডাবের পানি পান করলে কি কি উপকার হয় আসুন তাহলে সেটি জেনে নেওয়া যাক।

আরো পড়ুনঃ অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ জেনে নিন

  • ডাবের পানি শুধুমাত্র আমাদের পিপাশা মেটায় না, সাথে সাথে কিছু রোগের মহা ঔষধ হিসেবে কাজ করে এই ডাবের পানি। যেমন: কিডনিতে পাথর, আলসার, মূত্রনালির সংক্রামণ, ডায়রিয়া ইত্যাদি রোগে। ঔষধের পাশাপাশি ডাক্তাররা ডাবের পানি পান করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
  • শরীরের কোনো যায়গা কেটে গেলে অনেকেই আমরা এন্টিসেপ্টি সি লাগায় কিংবা ঔষধ খায়। কিন্তু কোনো কাটা স্থান যদি ডাবের পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা হয় তবে সেই ডাবের পানি স্যাভলন বা ডেটলের থেকেও বেশি ভালো কাজ করে বলে জানিয়েছেন ডাক্তাররা।
  • ডাবের পানিতে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন সি, রিবোফ্লেভিন ও কার্বোহাইড্রেট সহ উপস্থিতি পাওয়া যায়। তাই পানি পান করার পাশাপাশি যদি ডাবের পানি দিয়ে মুখ ধোয়া যায় তাহলে কোনো রাসায়নিক ক্রিম ব্যবহার করা ছাড়ায় আমাদের মুখের ব্রণ, পক্স ইত্যাদির মত দাগ থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।
  • ডাবের পানি নিয়মিত পান করলে শরীরের অপ্রয়োজনীয় মেদ ঝরে যায়। ফলে আপনি অত্যধিক ওজনের হাত থেকে মুক্তি পেতে পারেন বা ওজন ঝরিয়ে ফেলতে পারেন। এছাড়া ডাবের পানি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
  • ডাবের পানিতে থাকা প্রতি ১০০ গ্রামে ১৬.০৭ ক্যালোরি শক্তি থাকে। এছাড়া ডাবের ভিতরে যে শাঁশ থাকে তা থেকেও প্রচুর ক্যালোরি শক্তি পাওয়া যায়। ডাবের শাঁশ শরীরের ক্ষমতাকেও বাড়িয়ে দেয় কয়েক গুন।

ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম

প্রতিদিন ডাব খেলে কি হয়? বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করছি। কচি ডাবের পানি সবচেয়ে বেশি উপকারি। মনে রাখবেন সবুজ কচি ডাবের পানিতে আসলে পটাসিয়ামে ঠাসা এবং তাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে মিনারেলস্ থাকে, কিলো ক্যালেরির পরিমাণ খুবই কম। বলা হয় ১ গ্লাস কচি ডাবের পানি থেকে আপনি গড়ে ৩০ কিলো ক্যালোরি পাবেন।

ডাবের পানি অনেক স্বাস্থ্য সম্মত কিন্তু তাই বলে সবার জন্যে কি এই ডাবের পানি প্রযোজ্য বা কিভাবে খেতে হয় বা খাওয়ার নিয়ম কি এই ডাবের পানি চলুন জেনে নেওয়া যাক।
  • যারা ওজন কমানোর রাস্তায় আছেন তাদের মধ্যে একটা সংশয় থাকে যে তারা ডাবের পানি খেতে পারবে কি না? অবশ্যই আপনি ১ গ্লাস ডাবের পানি খেতে পারবেন তবে রোজ নয় মাঝে মাঝে।
  • ডায়াবেটিস এর রোগীরা ডাবের পানি খেতে পারবে কি না? ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কচি ডাবের পানি খুবই উপকারি। বিশেষ করে যেসকল ডায়াবেটিস রোগীরা প্রেশারে ভূগছেন তাদের জন্য এটি অত্যন্ত উপকারি একটি পানি। কারণ এটির মাধ্যমে তাদের পটাশিয়াম যায় শরীরে এবং প্রেশার নিয়ন্ত্রনে থাকে। আর ক্যালোরি কম থাকার কারণে সুগার বাড়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে।
  • বাচ্চারা ডাবের পানি খেতে পারবে কি না? অবশ্যই ডাবের পানি খেতে পারবে বাচ্চারা। তবে মনে রাখতে হবে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অল্প পরিমাণ পানি দিতে হবে কেননা ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। বিশেষ করে যে বাচ্চাগুলো একটু দূর্বল বা যে বাচ্চাগুলোর প্রেশার লো থাকে।

ডাবের পানি কখন খাওয়া ভালো

প্রতিদিন ডাব খেলে কি হয়? এই নিয়ে ইতিমধ্যে অনেক কিছুই আলোচনা করা হয়েছে। ডাবের পানি কখন খাওয়া ভালো এই বিষয়টাও অনেকে জানেন না। ডাবের পানিকে বিবেচনা করা হয় একটি অসাধারন পানি হিসেবে। ডাবের পানিতে বেশ চাঙ্গা করে নিমেশেই। এছাড়া খেলাধুলার তাৎক্ষণিক শক্তি পেতে ডাবের পানি পান করা হয়।

দিন বা রাতের যেকোনো সময় ডাবের পানি পান করা যায়। কিন্তু অধিক ফল পেতে বা শরীরকে দ্বিগুন স্বুস্থ্য রাখতে ডাবের পানি পান করলে বেশি উপকার পাওয়া যাবে। অন্য পানিয় এর মত ডাবের পানি পান করার নির্দিষ্ট কোনো সময় সীমা নেই। চাইলেই দিন বা রাতে যেকোনো সময় ডাবের পানি পান করতে পারবেন। তবে সকাল সকাল খালি পেটে ডাবের পানি পান করা অনেক ভালো।

সকালে খালি পেটে ডাবের পানি খেলে কি হয়

প্রতিদিন ডাব খেলে কি হয়? এই বিষয়ে আপনারা অনেক কিছুই জেনেছেন। সকালে খালি পেটে ডাবের পানি খেলে কি হয় জানলে অবাক হবেন আপনিও। খালি পেটে ডাবের পানি করেই দেখুন মিলবে দারুন উপকার। সারা বছর ধরে যদি নিয়ম করে ডাবের পানি খাওয়া যায় তাহলে একাধিক রোগ শরীরের ধারের কাছে আসতে পারবে না।

ডাবের পানিতে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন সি, রিবোফ্লেভিন ও কার্বোহাইড্রেট নানা ভাবে শরীর গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। যেমন ধরুন হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে, ডাবের পানিতে ক্যালসিয়াম হাড়কে শক্ত করতে সাহায্য করে। শরীরকে বিষ মুক্ত করে, দেহের প্রতিটি কোনায় উপস্থিত ক্ষতিকর বিষাক্ত উপাদানদের বের করে দিতে এই প্রাকৃতিক উপাদানটির কোন বিকল্প হয় না বললেই চলে।

প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে ১ গ্লাস ডাবের পানি পান করলে নানা রোগ যেমন শরীরের ধারের কাছে আসতে পারে না তেমনি সার্বিক ভাবে শারীরিক ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রনে চলে আসে, কিডনির ক্ষমতা বাড়ে, পানির ঘাটতি মেটায়, শরীর এবং ত্বকের বয়স কমে, ওজন হ্রাস পায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে, হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে ইত্যাদি।

গর্ভাবস্থায় ডাবের পানির উপকারিতা

প্রতিদিন ডাব খেলে কি হয়? এই নিয়ে আমরা কথা বলেছি। গর্ভাবস্থায় ডাব একটি অপরিহার্য পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার। গর্ভবতী মা এবং বাচ্চার সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য একে সুপার ফুডও বলা যায়। ডাবের লিউরিক অ্যাসিড হবু মায়ের বুকের দুধের সঞ্চালন বাড়ায় এবং গর্ভকালীন মায়ের জয়েন্টের ব্যথা কমায়। এছাড়া ডাবে থাকা ভিটামিন ই গর্ভবতী মায়েদের জন্য অবশ্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান।

আরো পড়ুনঃ মেথির উপকারিতা ও অপকারিতা কি।

সুস্থ-সবল বাচ্চা জন্মদান এবং গর্ভধারণকালীন অসুস্থতা দূরে রাখতেও ডাবর গুরুত্ব অপরিসীম। ডাবের পানি শরীরে প্রস্রাবের পরিমাণ এবং বেগ দুইই বাড়িয়ে দেয় , ফলে যেসব ব্যাক্টেরিয়া শরীরে পেশাবের সংক্রমণ ঘটায়, তারাও পেশাবের সঙ্গে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। গর্ভবতী নারী প্রচুর পরিমাণ ইলেক্ট্রোলাইটের প্রয়োজন পরে। ডাবের পানির সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং পটাসিয়াম শরীরে প্রয়োজনীয় চার্জ দিয়ে থাকে।

লেখকের শেষ কথা

প্রতিদিন ডাব খেলে কি হয়? এই বিষয়টি ছাড়াও অনেক গুলো বিষয় সম্পর্কে আমরা জানতে পেরেছি। যদি আপনি লেখাগুলো মন দিয়ে পড়ে থাকেন তাহলে ডাবের পানি খেলে বা ডবের পানি নিয়ে আপনার যত প্রশ্ন ছিল তার উত্তর পেয়ে যাবেন। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনি মন দিয়ে পড়েছেন এবং বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।

আমার আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে বা আপনার উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন। কারণ আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত এই ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাফারি a2z এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url