মেথির উপকারিতা ও অপকারিতা কি।
মেথির উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই আছে। এই মেথি হাজার বছর ধরে আয়ুরবেদ চিকিৎসাশাস্ত্রে ব্যবহার হয়ে আসছে। কিন্তু সাইন্স কি বলেছে, এই মেথির মধ্যে এমন কি ঔষধি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যার জন্য মেথি আমাদের এত উপকারে লাগে। এছাড়াও চুলের জন্য মেথির উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
মেথি পুরুষের জন্য কতটা উপকারি, মেথি মেয়েদের জন্য কতটা উপকারি, মেথি চিবিয়ে খেলে কি হয়, চুলের জন্য মেথির উপকারিতা এগুলো সবকিছু নিয়ে আজকে আমি আপনাদের মাঝে আলোচনা করবো।
ভূমিকা
মেথি যে শুধু মাত্র আমাদের রান্নার স্বাদ ও সুগন্ধকে বৃদ্ধি করতে পারে তাই নয় প্রায় চার হাজার বছর আগে থেকে আয়ুরবেদ চিকিৎসাশাস্ত্রে এই মেথির ব্যবহার হয়ে আসছে। মেথির যে যাদুকারি উপকারিতা গুলো আমরা পেয়ে থাকি সেগুলো নিয়ে আজকে আমরা কথা বলবো। আসুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক মেথির উপকারিতা ও অপকারিতা এবং মেথির কাজ গুলো কি কি।
পুরুষের জন্য মেথির উপকারিতা
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে মেথির মধ্যে শত শত ঔষুধি গুনাবলী রয়েছে যা আমাদের সাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারি। বিশেষ করে মেথি ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণ করে, রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে, মেথি ওজন কমাতে সহায়তা করে ইত্যাদি। এছাড়াও মেথির আরোও অনেক অনেক উপকারিতা রয়েছে যেটা আসলে বলে শেষ করা যাবে না। তবে মেথির উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই রয়েছে।
বিশেষ করে মেথি পুরুষদের যৌ*ন সাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারি একটি উপাদান। International Journal of Medical Science এ একটি গবেষণায় দারুন একটা তথ্য সামনে এসেছে তো সেখানে বলা হয়েছে যে মেথি পুরুষদের শরীরে টেস্টোস্টেরন নামক যে হরমোন টা আছে সেটার পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে।
মেথির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে অনেক কিছুই বলা যায়। যেমন ছোট্ট এই মেথি দানার মধ্যে এমন কিছু উপাদান আছে যা খেলে পুরুষদের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের পরিমাণ খুব সহজেই বৃদ্ধি পায়। মেথি খুব ধীরে ধীরে কাজ করে এবং এটা আপনাকে লম্বা সময় ধরে খেতে হবে। সর্বনিম্ন ১-২ মাস এবং সর্বোচ্চ ৩-৪ মাস পর্যন্ত একটানা খাওয়া লাগতে পারে।
তবে একটানা ৩-৪ মাসের বেশি না খাওয়ায় ভালো, প্রয়োজনে কিছুদিন বাদ দিয়ে আবার খাওয়া যেতে পারে। মেথি খাওয়ার পাশাপাশি আপনাকে অবশ্যই একটা হেলদি লাইফস্টাইল ফলো করতে হবে তাহলে আশা করা যায় আপনি খুব দ্রুত আপনার লক্ষ্যে পৌছে যেতে পারবেন।
খালি পেটে মেথি খাওয়ার উপকারিতা
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মেথি চিবিয়ে খেলে বা এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রেখে সেই পানি পান করলে হতে পারে অনেক সমস্যার সমাধান। যেমন রক্তে সুগারের মাত্রা কমে, দেহে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়, হজমের সমস্যা সমাধান হয়, এমনকি চুল পরার হাড় কমে যায়। এছাড়াও মেথির আরোও অনেক মেথির উপকারিতা ও অপকারিতা আছে।
যারা ইতিমধ্যে ডায়াবেটিসে ভূগছেন তারা নিয়মিত মেথি ভেজানো পানি সকালে খেতে পারেন। মেথি ওজন কমাতে সাহায্য করে, মেথি জ্বরের প্রকোপ কমায়,মেথি কিডনির ফাংশন উন্নত করে।এছাড়াও মেথি বাতের ব্যথা কমায়, লিভারের কার্যকারিতা বাড়ায়, হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে। মেথির গুনাগুন এত যে, এর জন্য মেথিকে সুপারফুড বলা হয়।
মেয়েদের জন্য মেথির উপকারিতা
মেথি ত্বক ও চুলের জন্য খুবই উপকারি। সামান্য মেথি খাবারের স্বাদ ও গন্ধকে বদলে দেয়। যেসব মেয়েরা ডায়াবেটিস বা পরিপাক সম্পর্কিত সমস্যায় ভূগছেন তাদের জন্য এই মেথি খুবই উপকারি। এছাড়া খুশকি, ব্রণ ও ঋতুস্রাবের সময় পেট ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে এই মেথি। তাছাড়া মেথির উপকারিতার ও অপকারিতা আছে যেগুলো আমি আপনাদের বলে দিব।
চুলের জন্য মেথির উপকারিতা
আপনারা অনেকেই জানেন না যে চুলের জন্য মেথি ব্যবহার করবো নাকি খাবো। ব্যবহার করলে কোন নিয়মে করবো বা খেলে কোন নিয়মে খাবো। যাদের চুল পড়ছে বা চুলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে, ছেলে-মেয়ে সকলের জন্য মেথি খাওয়া ও ব্যবহার করা উচিত। বিশেষ করে মেথি ব্যবহারের সাথে আরোও দুই একটি উপাদান ব্যবহারের কথা বলে দিব আশা করি আপনার কাজ লাগবে।
আমরা সকলেই কম বেশি জানি আমাদের চুলের জন্য ও মানবসাস্থ্যের জন্য মেথি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। মেথিকে ঔষধি উপাদান বলা যায় ভেষজ গুণে ভরপুর। আমরা অনেকেই আছি মেথি খেতে চাই আবার অনেকেই আছি ব্যবহার করতে চাই কিন্তু সঠিক নিয়মটা জানি না। চুলের কথায় যদি আসতে যায় তাহলে আপনাকে আগে জানতে হবে চুল কেন পড়ে।
যদি আপনি জানতে পারেন যে চুল কেন পড়ছে তাহলে সমাধানটা আরোও দ্রুত পেয়ে যাবেন। সাধারণত চুল পড়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, বিভিন্ন রোগের কারণে, ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে চুল পড়তে পারে। আসুন তাহলে এবার জেনে নেওয়া যাক মেথি কিভাবে ব্যবহার করবেন বা কিভাবে খাবেন।
মেথির উপকারিতা ও অপকারিতা অনেক। বর্তমানে আমাদের অনেকেরই চুল পড়ে যাওয়ার মতো সমস্যা রয়েছে। এই মেথি চুল পড়া কমিয়ে চুলের গোড়া শক্ত ও মজবুত করে। মেথিতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন-সি ও ভিটামিন-এ। এই দুটি ভিটামিন চুলকে অধিক শক্তিশালী করে এবং চুল পড়ে যাওয়ার প্রবনতাকে প্রতিরোধ করে। এছাড়াও খুশকি দূরীকরণে দারুণ ভূমিকা পালন করে এই মেথি। মেথির প্রাকৃতিক জেলোটিন মেলানিন চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও চুল কালো রাখতে বেশ সহায়ক।
রাতে পানির সাথে চা চামুচের ১-২ চামুচ মেথি ভালো করে ধুয়ে ভিজিয়ে রাখবেন। সকাল বেলায় খালি পেটে সেই মেথি ভেজানো পানিটা খাবেন। যদি সম্ভব হয় মেথি সহ খাবেন। অনেকের মেথি খেতে খারাপ লাগে এক্ষেত্রে শুধু মেথি ভেজানো পানিটা খেতে পারেন। এই একই পানি আপনারা আপনাদের চুলের গোড়ায় ব্যবহার করতে পারেন ভালো ফলাফল পাবেন।
এছাড়া আপনারা মেথি কিছুক্ষন ভিজিয়ে রেখে সেই মেথি পেষ্ট আকারে তৈরি করে বা বেটে সেই মেথির সাথে যদি পারেন এলভেরা মিশিয়ে চুলের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত ব্যবহার করে ৩০-৪০ মিনিট রেখে দিয়ে ধুয়ে ফেলতে পারেন। ভালো একটা ফলাফল পাবেন আশা করা যায়। চুলের জন্য মেথির উপকারিতা কতটুকু আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
মেথি মুখে দিলে কি হয়
মেথি মূলত মশলা হলেও ত্বক, চুল ও স্বাস্থ্যের উপকারের জন্য মেথি অতুলনীয়। মেথি ভেজানো জল একদিকে যেমন শরীরের জীবানুনাশক হিসাবে সাহায্য করে তেমনি অপরদিকে চুলের যত্নে মেথির গুরুত্ব ও অপরিসীম। শুধু চুল বা স্বাস্থ্য ই নয় ত্বক চর্চা তেও মেথির ব্যবহারের অসংখ্য উপকারিতা রয়েছে। মেথি মুখে দিলে আগের তুলনায় উজ্জল, টানটান, দাগছোপহীন ও মসৃণ হয়।
আরোও পড়ুনঃ রক্ত দানের উপকারিতা ও অপকারিতা
ত্বকের বিভিন্ন অসুখ সারাতে কাজে লাগে মেথি। মেথি ব্যবহারে ত্বক উজ্জল হয়ে ওঠে। মেথি দানা আমাদের শরীরের ফ্রি রেডিকেল গুলোকে ধংস করে দেয়। এই ফ্রি রেডিকেলের কারণেই মুখে কালো দাগ হয়। বলা যায় মেথি সেই ফ্রি রেডিকেল গুলোকে নষ্ট করে দেয় বলেই ত্বক উজ্জল হয়ে ওঠে।
মেথির উপকারিতা ও অপকারিতা কি
সাস্থ্যের জন্যে খুবই উপকারি হচ্ছে মেথি। মেথি হচ্ছে আমাদের দেশে একটি পরিচিত নাম। এই মেথি নিয়ম মেনে খেলে এর উপকারিতা অনেক। বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরা এই মেথিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রটিন, ফাইবার, ম্যাগনেসিয়াম, ফ্যাট, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, কপার। পরিমানে কিছুটা কম হলেও এতে আরো আছে, কোলিন, বায়োটিন, ইনসিটল, ভিটামিন-বি, পটাশিয়াম, জিংক, ফোলেট, সেলেনিয়াম, ফসফরাস ও এমাইনো এসিড।
বর্তমানে আধুনিক বিজ্ঞানদ্বারা প্রমানিত শরীরের নানাবিধ সমস্যা সমাধানে এবং ত্বক ও চুলের যত্নে মেথি একটু সুপার ফুড। কিছুটা তিতা স্বাদের জন্য মেথি অনেকেই অপছন্দ করেন। কিন্তু এই তিতা স্বাদযুক্ত মেথির উপকারিতা ও পুষ্টিগুন সত্যিই অবাক করার মতো। গবেষনায় দেখা গিয়েছে যদি মেথি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখা যায় তবে ভেজাল খাবার ও দূষিত পরিবেশের মধ্যেও সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব।
আদিকাল থেকে যুগ যুগ ধরে আয়ুর্বেদিক, কবিরাজী ও ইউনানী চিকিৎসায় একটি সুপরিচিত নাম মেথি। মেথির উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই আছে। মেথি আমাদের শরীরের উপকারের পাশাপাশি ক্ষতিরও কারণ বটে। মেথি যেকোনো ব্যক্তির জন্য খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই মেথি খেয়ে যদি শরীরের ক্ষতি করতে না চান তাহলে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
প্রিয়পাঠক, মেথি মসলাদার খাবারও বটে। রোগ মুক্তির জন্যও মেথি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু মেথির যে অপকারিতা গুলো আছে তা হলোঃ-
- মাথা ঘোরা- মেথির গুঁড়া মুখের ভেতর গেলে তেঁতো বোধ হয়। ফলে অনেকের বমি বমি ভাব লাগে বা মাথা ঘোরার মতো ঘটনা ঘটতে পারে।
- ব্লাড সুগারের ক্ষেত্রে- মেথির ব্যবহারে ব্লাড সুগারের পরিমাণ হঠাৎ করেই কমে যেতে পারে। সুতরাং আপনার শরীরের জন্য কতটুটু মেথির প্রয়োজন তা অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শক্রমে জেনে নিতে হবে।
- শরীরে দূর্গন্ধ সৃষ্টি হওয়া- মেথি দীর্ঘদিন ধরে খাওয়ার ফলে শরীর থেকে একটা দূর্গন্ধের সৃষ্টি হয় য অস্বস্থিদায়ক। সেক্ষেত্রে মেথি ব্যবহারের প্রতি সতর্কতা অবলম্বন করুন।
- রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষেত্রে- মেথির দানা রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। যাদের রক্ত পাতলা তাদের রোজ মেথি ব্যবহার করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া দরকার।
- গর্ভবতী অবস্থায়- গর্ভবতী মহিলারা মেথি ভেজানো পানি দীর্ঘদিন ধরে থেতে থাকলে সময়ের আগেই শিশুর জন্ম দেওয়া এমনকি গর্ভপাতের মত ঘটনাও ঘটতে পারে।
লেখকের শেষ কথা
মেথির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে উপরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। যদি আপনি লেখাগুলো মন দিয়ে পড়ে থাকেন তাহলে মেথি নিয়ে আপনার যত প্রশ্ন ছিল তার উত্তর পেয়ে যাবেন। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনি মন দিয়ে পড়েছেন এবং বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
আমার আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে বা আপনার উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন। কারণ আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত এই ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি। ধন্যবাদ।
সাফারি a2z এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url