কম্পিউটার ভাইরাস বলতে কি বুঝায় জেনে নিন।

কম্পিউটার ভাইরাস বলতে কি বুঝায় সেটা আজকে আমরা জানবো এবং জানতে হলে আপনাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে। কম্পিউটার ছাড়া বর্তমান যুগ একেবারেই অচল। সেই সাথে কম্পিউটার ভাইরাস কি কি ক্ষতি করে সেটি নিয়েও আজকে আমরা আলোচনা করবো
কম্পিউটার ভাইরাস বলতে কি বুঝায় জেনে নিন।
এখন কেউ যদি আপনাকে প্রশ্ন করে যে কম্পিউটার কি? কে আবিষ্কার করেছেন? কম্পিউটার ভাইরাস কি? তাহলে আপনি কি উত্তর দেবেন। কম্পিউটার ভাইরাস বলতে কি বুঝায় আসুন তাহলে জেনে নেয়।

ভূমিকা

কম্পিউটার হলো এমন একটি যন্ত্র যা সুনির্দিষ্ঠ নির্দেশ অনুসরন করে গানিতিক গননা সংক্রান্ত কাজ খুব দ্রুত করতে পারে। এটি একটি গ্রিক শব্দ যা Compute শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ হলো গননা করা। কম্পিউটার মূলত তৈরি করা হয়েছিল গননার জন্য। কিন্তু বর্তমানে এটিকে জটিল ও কঠিন হিসাব নিকাশ ছাড়াও আরোও অনেক কাজে লাগানো হচ্ছে।

কম্পিউটার ভাইরাস বলতে কি বুঝায়

আমরা ভাইরাস কথাটির সাথে কম বেশি সবাই পরিচিত। ভাইরাস নামটি শুনলেই যেন আমরা চমকে উঠি। প্রাণী থেকে আরাম্ভ করে উদ্ভিদ সকলেই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়। ভাইরাস সাধারনত জীবিত বস্তুকেই আক্রমন করে। কিন্তু আজ এই আধুনিক সমাজে কম্পিউটার কিংবা স্মার্ট ফোনও ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় যা আমাদের কাছে একটি আশ্চযের ব্যাপার।

আরো পড়ুনঃ মজাদার সাইকোলজি ফ্যাক্ট | 10 Amazing Psychological Fact

কম্পিউটার ভাইরাস হলো এক প্রকার ক্ষতিকারক প্রোগ্রাম। বাইরের উৎস থেকে কম্পিউটারের মেমোরীতে প্রবেশ করে এবং মেমোরীতে গোপনে বিস্তারলাভ করে মূল্যবান তথ্য নষ্ট করে এবং কম্পিউটারকে বিকল করে দেয়। ভাইরাস হলো এমন একটি ধ্বংসাত্মক বা অনিষ্টকারী প্রোগ্রাম যা নিজেকে অন্য সফ্টওয়্যার বা প্রোগ্রাম কপি করতে পারে।

এবং সেই প্রোগ্রাম বা সফ্টওয়্যারের ক্ষতি সাধন করে। যে প্রোগ্রামগুলো ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত সেই গুলোও ভাইরাসের হয়ে অন্যান্য অসংক্রমিত প্রোগ্রামগুলোতে সংক্রমন ঘটায়। কম্পিউটারের পরিভাষায় ভাইরাস শদ্বটিকে ভাঙ্গলে পাওয়া যায় (Vital Information Resources Under Seize) অর্থাৎ গুরুত্বপূর্ন তথ্যের উৎসগুলো বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

কম্পিউটার ভাইরাস কি কি ক্ষতি করে

কম্পিউটার ভাইরাস বলতে কি বুঝায় সেটি ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি। ভাইরাসের মূল কাজ হলো সে আপনার, কম্পিউটার সিস্টেমে ঢুকে, অন্য প্রোগ্রাম বা ফাইলকে মোডিফাই (Modify) করে নিজের কিছু ক্ষতিকারক কোড প্রোগ্রামগুলো লিখে দেয়। এতে আপনার কম্পিউটারের অন্যান্য ফাইলগুলো সেই ক্ষতিকারক ভাইরাসটির মতো কাজ করা শুরু করে দেয়।

তাই আপনারা অনেক সময় লক্ষ্য করেছেন হয়তো। আপনার কম্পিউটারে হঠাৎ কোনো Function নিজেই শুরু হয়ে গেলো, কম্পিউটার রিস্টার্ট (Restart) হয়ে গেলো, সিস্টেম ফাইল এমন সন্দেহজনক প্রসেস যেগুলো নিজে নিজেই কাজ করছে আপনারা করছেন না। যদি এগুলো আপনার কম্পিউটারে হয় তাহলে সম্ভাবনা এটাই যে আপনার কম্পিউটারেও ভাইরাস আছে।
কম্পিউটারে ভাইরাস ঢুকলে কিভাবে বুঝবেন আসুন তাহলে জেনে নেয়।
  • কম্পিটারের স্পীড স্লো হয়ে যায়।
  • বিভিন্ন প্রোগ্রামের লোডিং সময়টা বেড়ে যায়।
  • হঠাৎ করে কম্পিউটার বন্ধ হয়ে যায়।
  • প্রতিদিনের ব্যবহৃত ফাইলগুলির আয়াতন বৃদ্ধি পায়।
  • অদ্ভূত কিছু এরর (Error) মেসেজ দেখায়।
  • অনেক গুলো টেম্পোরারি ফাইল জমা হয়।

বিভিন্ন ধরনের কম্পিউটার ভাইরাসের নাম

সারা বিশ্বে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ভাইরাস সৃষ্টি হচ্ছে। কম্পিউটার ভাইরাস বলতে কি বুঝায় সেটি ইতিমধ্যে জেনেছি। এই ভাইরাস গুলো আপনার কম্পিউটার কিংবা স্মার্ট ফোন বিকল করার জন্য যথেষ্ট। প্রত্যেক ভাইরাসের বৈশিষ্ট বিভিন্ন রকমের হয়। যার ফলে এদের দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতির প্রকৃতিও বিভিন্ন ধরনের। এবার জেনে নেওয়া যাক বিভিন্ন ধরনের কম্পিউটার ভাইরাসের নাম ও এগুলোর বৈশিষ্ট।
  • বুট ভাইরাসঃ- এই ধরনের ভাইরাস গুলো ফ্লপি বা হার্ড ডিস্কের বুট সেক্টরকে আক্রমন করে। বুট সেক্টর মধ্যস্থ বুট প্রোগ্রামটিকে নষ্ট করে দেয়। এর ফলে সিস্টেমটিকে বুট হতে বাধা দেয়। প্রথম বুট সেক্টর ভাইরাসের নাম হলো Brain.
  • ফাইল বা প্রোগ্রাম ভাইরাসঃ- এই ভাইরাস গুলো কম্পিউটার ও সফটওয়্যারের সিস্টেম ফাইল যেমন .exe, .com, .sys ইত্যাদি ফাইল গুলোকে নষ্ট করে দেয়। উদাহরণ- Cascade, Sunday, Acid Rain, Trojon.
  • ফ্যাট ভাইরাসঃ- এই ভাইরাস গুলো ডিস্ক মধ্যস্থ FAT কে আক্রান্ত করে ডিরেক্টরীর ভেতরের কোনো ফাইলের তথ্য বা পুরো ডিরেক্টরীর সমস্ত ফাইল নষ্ট করে দেয়। উদাহরণ- Link Virus.
  • রেসিডেন্ট ভাইরাসঃ- এই ভাইরাস গুলো কম্পিউটারের প্রধান মেমোরীতে আক্রমন করে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করে মেমোরীর দখল নেয়। ফাইল Corrupt করে দেয় এবং সিস্টেমের কাজ বাধা প্রাপ্ত হয়। এর ফল স্বরুপ ফাইল খোলা, বন্ধ করা, কপি করা, রি-নেম করা ইত্যাদি কাজ বাধা প্রাপ্ত হয়। উদাহরণ- CMJ, Randex.
  • ম্যাক্রো ভাইরাসঃ- যে সকল অ্যাপ্লিকেশন বা প্রোগ্রাম ফাইল গুলোর মধ্যে ম্যাক্রো বর্তমান। সেই সকল অ্যাপ্লিকেশন বা প্রোগ্রাম ফাইল এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়। ম্যাক্রো ভাইরাস দ্বারা উক্ত প্রোগ্রাম গুলো সংক্রামিত হলে সেগুলোর কাজে বিঘ্ন ঘটে বা নষ্ট হয়ে যায়। উদাহরণ- y2k, Relax, W97M, DVM.

পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার ভাইরাসের নাম কি

কম্পিউটার ভাইরাস বলতে কি বুঝায় তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আমরা সবাই জানি যে অতি সামান্য ভাইরাসও যদি কম্পিউটারের ভেতর প্রবেশ করে তাহলে সেই কম্পিটারে কাজ করতে কিরকম মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু আপনি জানেন কি পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম কম্পিউটার ভাইরাস কোনটি ছিল?

১৯৭১ সালে মানুষ নিজে থেকে একটা ভাইরাস বানিয়ে ছিল যটির নাম ছিল CREEPER, শুধু পরিক্ষা করার জন্য এই ভাইরাসটি বানানো হয়েছিল। এটি বানানোর উদ্দেশ্য ছিল এই যে কম্পিউটারের মধ্যে যদি কোনো ভাইরাস প্রবেশ করে তাহলে সেই কম্পিউটারের উপর কি প্রভাব পড়ে। CREEPER ভাইরাস শক্তিশালী ভাইরাস নয়।

কম্পিউটার ভাইরাস থেকে বাঁচার উপায়

কম্পিউটারকে ভাইরাস মুক্ত রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা প্রয়োজন। যেমন- এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ইন্সটল (Install) করা এবং নিয়মিত চালনা করা। এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার নিয়মিত আপডেট করা। যেকোনো ধরনের ডিস্ক ব্যবহারের পূর্বে ভাইরাস আছি কিনা তা চেক করা। দরকারি ফাইল গুলোকে ব্যাকআপ করা।

সকল রকম ভাইরাসকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করা। কোন পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার না করা। প্রোগ্রাম ফাইল রিড অনলি করে রাখা। ইমেল বা ইন্টারনেট করার সময় সর্বদা পরীক্ষা করা। রোকাল নেটওয়ার্ক সিস্টেম এর সকল কম্পিউটারের ভাইরাস চেক করা ইত্যাদি। এই পদক্ষেপ গুলো মেনে চললে কম্পিউটার ভাইরাস থেকে বাঁচা যাবে।

এন্টিভাইরাস কি ধরনের সফটওয়্যার

কম্পিউটার ভাইরাস বলতে কি বুঝায় সেটি তো আমরা ভালোভাবে বুঝতে পেরেছি। এবার আমরা আলোচনা করবো এন্টিভাইরাস সম্পর্কে। এন্টিভাইরাস হলো এক ধরনের সফটওয়্যার যা একটি কম্পিউটারের সিস্টেম কে ভাইরাস মুক্ত এবং বিভিন্ন ধরনের ম্যালওয়্যারের হাত থেকে রক্ষা করার একটি সফটওয়্যার। এটি ভাইরাসকে সনাক্ত করে এবং প্রতিরোধ করে।
প্রথম এন্টিভাইরাসের নাম সিম্যানটেকনর্টন। ১৯৯১ সলে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম প্রকাশ করা হয়। কয়েকটি এন্টিভাইরাসের নাম জেনে নিন।
  • অ্যাভাস্ট
  • ম্যাকফি
  • রিভ এন্টিভাইরাস
  • এভিজি
  • কাসপারস্কি
  • নরটন
  • পিসিসিলিন

লেখকের শেষ মন্তব্য

কম্পিউটার ভাইরাস বলতে কি বুঝায় তা বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। তাছাড়া এন্টিভাইরাস নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি চান আপনার কম্পিউটারটি ভাইরাস মুক্ত থাকুক তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার মনযোগ সহকারে পড়া উচিৎ। কারণ আর্টিকেলটিতে কম্পিউটার ভাইরাস এবং এন্টিভাইরাস সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

আমার আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে বা আপনার উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যমূলক বিষয় নিয়মিত জানতে হলে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ফলো করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাফারি a2z এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url